তুলক পণ্ডিত জাতক কাহিনী-২
তুলক পণ্ডিত জাতক - ২
“মহারাজ এ চোরগণ” ইহা বুদ্ধ জেতবনে অবস্থানকালে নিজের দান পারমীকে
উপলক্ষ করে বলেছিলেন।
একদিবস
ভিক্ষুগণ ধর্মসভায় উপবিষ্ট হয়ে পরস্পর এরূপ আলোচনা করছিলেন―“অহো
বন্ধুগণ! আমাদের শাস্তা দেব-মানবের একান্তই ত্রাণকর্তা। অতীত জন্মে তিনি দান পারমী
ধর্ম পূর্ণ করেছিলেন।” ইত্যাদি গুণ বর্ণনা করে ভিক্ষুগণ ধর্মশালায় উপবিষ্ট
আছেন। এমন সময় শাস্তা এবিষয় অবগত হয়ে ধর্মসভায় উপস্থিত হলেন এবং আসনে উপবিষ্ট হয়ে বললেন―“হে
ভিক্ষুগণ, এখন তোমরা কি আলোচনা নিয়ে এখানে উপবিষ্ট আছ? তখন ভিক্ষুগণ তাঁদের আলোচ্যমান
বিষয় যথাযথভাবে বুদ্ধের নিকট প্রকাশ করলেন। বুদ্ধ তা শুনে বললেন―
ভিক্ষুগণ, তথাগত যে এখন দেব-নরের ত্রাণকর্তা, এ বড় আশ্চর্যের বিষয় নয়। পূর্বেও আমি
বোধিসত্ত¡াবস্থায় এবং কোণাগমন বুদ্ধের শাসনে দ্বাত্রিংশ ভিক্ষ ও একজন শ্রামণের
অধিনায়ক হয়ে ধন ও জীবন পরিত্যাগ করেও ভগবানের শাসন পূজা মানসে বহু সুবর্ণ দান করেছিলাম।
তা কিন্তু এর চেয়েও আশ্চর্য। এ বলে বুদ্ধ মৌনভাব ধারণ করলেন। তখন ভিক্ষুগণের প্রার্থনায়
তিনি সুদূর অতীতের আশ্চর্যজনক বিষয়টি বলতে আরম্ভ করলেন―
“ভিক্ষুগণ, সুদূর অতীতে কোণাগমন নামক ভগবান পরিনির্বাপিত
হওয়ার পর তাঁর শাসন জগতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন চিন্ন নামক নগরে ‘চিন্ন’ নামক এক রাজা রাজত্ব করতেন।
রাজার
একজন মিথ্যাদৃষ্টি পরায়ণ পুরোহিত ব্রাহ্মণ ছিলেন। তখন বোধিসত্ত¡
উক্ত নগরে সুজাত নামক ব্রাহ্মণের পত্নী সুজাতা নাম্নী ব্রাহ্মণীর জঠরে প্রতিসন্ধি গ্রহণ
করলেন। দশমাসের পর সুজাতা এক অভিরূপ পুত্রসন্তান প্রসব করলেন। এ পুণ্যবান শিশু অনুক্রমে
বয়ঃ বৃদ্ধির সাথে সাথে তীক্ষ্ন প্রজ্ঞার অধিকারী হয়ে উঠলেন। তরুণ কালে তিনি নিজগৃহে
যা করতেন, তা স্বীয় প্রজ্ঞাবলে তুলা বা তুলাদণ্ডের ন্যায় সমপরিমাণ করে করতেন। তাই পিতা-মাতা
তাঁর নাম রাখলেন “তুলক পণ্ডিত।” ইতি ষোড়শ বর্ষ বয়ঃক্রমকালে দর্শনীয়, শ্রীসম্পন্ন
হলেন। তাঁর পিতা-মাতা সম্ভার নাম্নী এক ব্রাহ্মণ কন্যার সহিত তাঁর বিবাহ কাজ সম্পন্ন
করলেন। বিবাহের দু’তিন বৎসর পরে তাঁরা একটা পুত্রসন্তান লাভ করলেন।
সে পুত্রের নাম করণ করলেন “সুবচ কুমার”। এক সময় কোণাগমন ভগবানের তেত্রিশজন ভিক্ষ শ্রাবক
সুন্দর সংযত পদবিক্ষেপে নগর পথে গমন করছিলেন। তখন এক পাপীষ্ট মিথ্যাদৃষ্টি সম্পন্ন
রাজ পুরোহিত ব্রাহ্মণ উক্ত ভিক্ষুগণকে দেখে এরূপ চিন্তা করল- “যদি ওই ভিক্ষুগণ এসে এখানে উপস্থিত হয়, আমাদের রাজা তাদের নিত্য দর্শনে
প্রসন্ন হয়ে তাদের মহা পূজা সৎকার করবে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের লাভসৎকারেরও পরিহানী ঘটবে।
এখন আমি রাজার অন্তরে বিরূপভাবের সৃষ্টি করে তাদের যাতে হত্যা করা হয়, রাজাকে বলে সে
চেষ্টাই করব।” এ চিন্তা করে সে তাড়াতাড়ি রাজার নিকট উপস্থিত হল এবং রাজার হস্ত ধারণ
করে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে বলল- “মহারাজ, দেখুন ওই চোরগণ। ওরা নিশ্চয়ই এখানে এসে আপনার
সমস্ত নগর লুণ্ঠন করবে। তাই তারা এদিকে আসছে।” এ বলে ব্রাহ্মণ রাজাকে নিম্নোক্ত গাথায় বলল-
১।
“মহারাজ রথার্ষাভ এ চোরগণ যে এদিকে আসছে দেখছেন, তারা
যেখানে সেখানে রাজ্য লুণ্ঠন করে বিচরণ করছে।” তা শুনে রাজা তথায় দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে অবলোকন
করে ভিক্ষুগণকে দেখে বললেন―
২।“এদিকে
আগমনকারী মানবগণ লুণ্ঠক নহেন। তাঁরা বুদ্ধ শাসনেরই সুশীল ভিক্ষু। কোন প্রয়োজনেই তাঁরা
এখানে আসছেন।” পাপিষ্ঠ ব্রাহ্মণ একথা শুনে রাজাকে বলল-“মহারাজ, আপনি এরূপ বলবেন না। এ চোরগণ শ্রমণ বেশ ধারণ করে আপনার সমস্ত
রাজ্যটা লুণ্ঠন করে বিনাশ করবার উদ্দেশ্যেই এখানে আসছে।”
রাজা এ পাপিষ্ঠ ব্রাহ্মণের কথা শুনে ক্ষুণ্ন হয়ে বললেন―
“হে পুরোহিত, যদি এরা চোর হয়, তবে তাদের কি করতে হবে।”
ব্রাহ্মণ বলল- “এখানেই এসব চোরের পশ্চাৎদিকে হস্ত বন্ধন করে ভীষণভাবে
প্রহার করতে করতে আমক শ্মশানে নিয়ে সবাইকে শূলে দেওয়া উচিত।”
চিন্নরাজ তার কথা অনুমোদন করে ঘাতককে ডেকে আদেশ করলেন―“হে
ঘাতক, এখন তুমি ওই চোরদের পঞ্চবন্ধনে বন্ধন করে দারুণভাবে প্রহার করতে করতে আমক শ্মশানে
নিয়ে যাও এবং সবাইকে শূলে দাও।” তখন ঘাতক গিয়ে ভিক্ষুদের জ্যেষ্ঠ “নাগদীপক” নামক মহাস্থবির প্রমুখ ভিক্ষুদের বন্ধন করল এবং
দারুণভাবে দুঃখদান করতে করতে আমক শ্মশানে নিয়ে যেতে লাগল। তখন ভিক্ষুগণ মহাদুঃখগ্রস্ত
হলেন। অতঃপর নাগদীপক স্থবির ভিক্ষুগণকে আশ্বাস বাক্যে বললেন―“বন্ধুগণ,
তোমরা অনুশোচনা ও রোদন করবেনা। এ দোষ কারো নয়, ইহা আমাদের জন্মান্তরের কর্মদোষই হবে
নিশ্চয়। তোমরা প্রমাদগ্রস্ত হবেনা।” এ বলে নিন্মোক্ত গাথাত্রয় ভাষণ করলেন―
৩।“আয়ুষ্মানগণ,
তোমরা বিলাপ করোনা। শ্রমণের কখনো বিলাপ করা উচিত নয়।
৪। জগতে জন্মগ্রহণকারী প্রাণীসমূহ সর্বদা শোক ও ভয়শীল এবং মরণাভিমুখী। ইহা জাগতিক নিয়ম।
৫।
সমস্ত সংস্কারধর্ম অনিত্য ইহা বুদ্ধবাণী। আপন পুণ্যই স্মরণ কর। অপ্রমত্ত হও।
বন্ধুগণ,
উপচ্ছেদক ইত্যাদি কর্ম সকলের পশ্চাতে ছায়ার ন্যায় অনুধাবিত হয়। কর্মই আমাদের বন্ধু।
এ আমক শ্মশানে সবাই কর্মের শরণাপন্ন হও।
৬।
আমি পূর্বে যে পাপকর্ম করেছি, তা-ই দুঃখের কারণ হয়েছে। তাই আমি অনুতাপ ও রোদন করিতেছিনা।
তোমরাও বিলাপ করোনা। স্থবিরের কথা শুনে ভিক্ষুগণ সান্ত¡না
লাভ করলেন। তৎপর আমক শ্মশানে স্থবিরকে সম্মুখে রেখে ভিক্ষুগণ ঘাতকের নিকট দাঁড়াল। ভিক্ষুদের
এরূপ দুর্দ্দশার কথা তড়িৎ বেগে সমস্ত নগরে প্রচার হল। ইহাতে জনগণ সংক্ষুব্ধ হল। এখবর
বোধিসত্ত তুলক পণ্ডিত শুনে দ্রুতপদে শ্মশানে নাগদীপক স্থবিরের নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে
বন্দনা করে জিজ্ঞেস করলেন―
৭।
“ভন্তে, এখানে আপনারা কোন দোষে দোষী হয়ে বন্ধন দশা
প্রাপ্ত হয়েছেন? ঘাতক কেনই বা আপনাদের এখানে এনেছে? তা আমাকে বলুন।”
স্থবির
বললেন―“উপাসক এজন্মে আমাদের অনুমাত্রও কোন দোষ দেখা যাচ্ছেনা।
তবে অতীত জন্মের দোষ ত জানি না।” এবলে নিম্নোক্ত গাথাটি বললেন―
৮।
আমাদের অতীত কমর্ েদাষের কথা জানিনা। বর্তমান জন্মের কোন দোষ আমার নিকট নেই।
৯।
এসব সুশীল ও সদাচার সম্পন্ন নির্দোষ ভিক্ষুগণ আমার সাথে বুদ্ধশাসনে অবস্থান করছে।
১০।
বর্তমান সময়ে এ ভিক্ষুদের অনুমাত্র দোষও দেখছিনা। হে মানব, এরূপই জ্ঞাত হউন।”
বোধিসত্ত¡ স্থবিরের কথা শুনে বললেন―“ভন্তে, যদি এরূপ হয়, আপনারা চিন্তা করবেন না। এখন
আপনাদের জীবন রক্ষার জন্য আমার জীবন বিসর্জন করব।” এ বলে বোধিসত্ত¡ স্থবির প্রমুখ ভিক্ষুগণকে বন্দনা করে ঘাতকের নিকট
উপস্থিত হলেন। তথায় নিজের মূল্যবান অলঙ্কারাদি উন্মোচন করে তা ঘাতকের হস্তে দিয়ে বললেন―
“তাত, তোমরা অল্পক্ষণ অপেক্ষা কর।” এ বলে তিনি রাজার নিকট গিয়ে তাঁকে বন্দনা করে বললেন―“মহারাজ,
আপনি আমার প্রতি ও ওই ভিক্ষুদের প্রতি অনুকম্পা করে তাঁদের মূল্য নির্দ্ধারণ করুন।
আমার নিকট হতে সে মূল্য বাবদ স্বর্ণ-রৌপ্য
গ্রহণ করুন। আপনি যেরূপ ধন ইচ্ছা করেন, সেসব দিয়ে দিব। শীঘ্রই ভিক্ষুদের মক্ত করে দিন।”
ইহা শুনে রাজা বললেন―“হে তুলক, যদি তুমি তুলাণ্ড গ্রহণ করে এসব ভিক্ষুর
দেহের ওজন পরিমাণ সুবর্ণ আমাকে দিতে পার, তবে তাদের মুক্তি দেব। বোধিসত্ত¡
রাজার কথা শুনে প্রীতিচিত্তে “সাধ দেব” বলে রাজাকে অভিবাদনান্তে মাতার নিকট উপস্থিত হলেন।
তিনি মাতাকে বললেন―
১১।
মা, আমি শ্রমণদের বিপদ মুক্তির জন্য আপনার নিকট সবর্ণ যাচ্ঞা করতে এসেছি।
১২।
মাত, শ্রমণদের রক্ষার জন্য আমাকে সবর্ণ প্রদান করুন। শ্মশানে শ্রমণদের মৃত্যু দুঃখ
হতে মক্ত করব।
১৩।
বুদ্ধশাসন বড়ই দুর্লভ। অপিচ স্বর্ণ-রৌপ্যাদি ধন-সম্পদ সর্বদা সুলভ। মাতঃ আমাকে সুবর্ণ
প্রদান করুন।” বোধিসত্তে¡র মাতা ইহা শুনে প্রীতি প্রমোদ্যচিত্তে বললেন―
১৪।
“পুত্র, তোমার কথা অতি সুন্দর ও সুফলপ্রদ, আমার নিকট
হতে তুমি যথেচ্ছা সুবর্ণ গ্রহণ কর।” মাতার এ উদার বাক্য শুনে তুলক পণ্ডিত পরম পুলকিত
হলেন এবং বিকশিত পদ্মের ন্যায় সহাস্যবদনে আসন হতে উঠে মহার্ঘ পোষাক পরিচ্ছদ পরিধান
করলেন। অতঃপর ধনাগারের দ্বার উন্মুক্ত করে বহু সবর্ণ গ্রহণ করলেন এবং তা রাজাঙ্গনে
স্তূপাকারে রেখে রাজার নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন―“মহারাজ, আপনি এখন সুবর্ণ গ্রহণ করুন। তৎপরিবর্তে
ভিক্ষুদের আমায় প্রদান করুন।” ইহা শুনে রাজা বললেন―
১৫।
“হে তুলক, তুমি যদি আমাকে ভিক্ষুদের সমপরিমাণ সুবর্ণ
দাও তাহলে সকলকেই তোমায় দিয়ে দেব’ তুমি সানন্দে তাদের গ্রহণ কর।”
তুলক পণ্ডিত রাজার কথা শুনে অত্যন্ত প্রীত হয়ে নাগদীপক স্থবিরের নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে
বন্দনা করে বললেন―“ভন্তে, আপনি আমার প্রতি অনুকম্পা করে এ পরিমাণ তুলাদণ্ড
আরোহণ করুন। আমি আপনার সমপরিমাণ স্বর্ণ রাজাকে দিয়ে আপনাকে এদুঃখ হতে মক্ত করব। ইহা
শুনে সংঘনায়ক প্রসন্ন বদনে ‘সাধ মহাপুরুষ “বলে তুলাদণ্ড
আরোহণ করলেন। মহাসত্ত¡ স্থবিরের সমপরিমাণ সুবর্ণ দাড়ি পাল্লায় দিয়ে স্থবিরকে
মক্ত করলেন। এ নিয়মে ত্রিশজন ভিক্ষুকে তিনি মৃত্যু দুঃখ হতে মক্ত করলেন বটে, কিন্তু
আর দুজন ভিক্ষ ও একজন শ্রমণকে মক্ত করতে পারলেন না, কারণ সুবর্ণ শেষ হয়ে গিয়েছে তখন
রাজা তুলক পপণ্ডিতকে বললেন―“হে পণ্ডিত, তোমার নিকট স্বর্ণ আর আছে কি?” বোধিসত্ত¡ প্রত্যুত্তরে বললেন―“দেব,
আমার নিকট আর স্বর্ণ নেই।” রাজা বললেন―“হে তুলক, এখন তুমি কি করবে?” মহাসত্ত
বললেন―“দেব, আপনি একট অপেক্ষা করুন”
এ বলে পুনরায় গৃহে গিয়ে স্ত্রী সম্ভার দেবীকে বললেন―“ভদ্রে, তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।”
পত্নী বললেন―“স্বামীন, কি কথা বলতে চান? ভদ্রে ত্রিশজন ভিক্ষুর
সমপরিমাণ স্বর্ণ দিয়ে তাঁদের জীবন রক্ষা করেছি। কিন্তু আরো দুজন ভিক্ষ ও শ্রামণকে এখনও
মক্ত করতে পারিনি। কারণ, স্বর্ণ নিঃশেষ হয়েছে। এখন নিজকে বিক্রয় করে তাঁদের মক্ত করতে
হবে। এতেই আমার সর্বজ্ঞতা লাভের হেতু সম্ভুত দান পারমী পূর্ণ হবে।”
ইহা শুনে সম্ভার দেবী প্রসন্ন বদনে বললেন―“স্বামীন, আমারও কিছ পুণ্যের প্রয়োজন। সুতরাং আমাকে
ও পুত্রকে বিক্রয় করে আপনি দান পারমী পূর্ণ করুন।” ইহা শুনে পণ্ডিত অতিশয় তুষ্ট হয়ে বললেন―
১৬।
“ভদ্রে, ‘সাধু’ তুমি সুফলদায়ক বাক্য ভাষণ করেছ। অনাগতে পরমজ্ঞান
লাভের জন্য তোমরা দুজনকে বিক্রি করব।
১৭।
তোমরা উভয়েই আমার অতিপ্রিয়। তবে বোধি লাভের ঐকান্তিক কামনায় তোমরা উভয়কেই বিক্রি করব।”
অতঃপর পণ্ডিত স্বীয় স্ত্রী ও পুত্র উভয়কেই কোনও এক ধনাঢ্যকুলে বিক্রি করে দুজন ভিক্ষুকে
মক্ত করলেন। আরো অবশিষ্ট আছেন একজন শ্রামণ। সংগৃহীত সুবর্ণ সবই নিঃশেষ হয়ে গেল। শ্রামণ
তা দেখে অতিশয় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে অধোশিরে শাশ্রু নয়নে বিলাপ করতে লাগলেন। বললেন―“এখনি
আমাকে হত্যা করা হবে।” এবলে মহাদুঃখে ম্রিয়মান হয়ে সংজ্ঞাশূন্য হয়ে পড়লেন।
পুনরায় সংজ্ঞা লাভ করে অশ্রু মুখে ঘাতককে বললেন―“তোমায় প্রার্থনা করছি আমার বন্ধন একট শিথিল করে দাও।”
এ কাতর প্রার্থনায় ঘাতক শ্রামণের বন্ধন-রজ্জ একট শিথিল করে দিল। তখন শ্রামণ নাগদীপক
স্থবিরকে বন্দনা করে বললেন―“ভন্তে, আমি আপনার শিষ্য। আমার কোন দোষ থাকলে ক্ষমা
করবেন। আমার পিতা-মাতা যদি আমার কোনও খবর জানতে চায়, তবে আপনি তাঁদের আমার প্রব্রজিত
উপকরণগুলি দেবেন।” এবলে নিম্নোক্ত গাথা পঞ্চক ভাষণ করলেন―
১৮।
“বুদ্ধ শাসনে সুপ্রসন্ন আমার পিতা-মাতা বিদ্যমান আছেন।
দঃখমুক্তির জন্য তাঁরা আমাকে বুদ্ধ শাসনে দান করেছেন।
১৯।
তাঁরা আমার এসব শ্রমণ উপকরণ সুষ্ঠুরূপে রক্ষা করবেন এবং আমার দর্শনে দীর্ঘকাল ধরে রোদন করবেন।
২০-২১।
আমার পিতা-মাতা আমাকে না দেখে স্বীয় ঘরে বসে নিশ্চয়ই প্রব্রজ্যার প্রতি ব্যথিত চিত্তে
দীর্ঘদিন রোদন করবেন।
২২।
এরূপে তাঁরা আমার অদর্শনে অর্ধরাত্রি অথবা সারারাত্রি অনবরত বিলাপ করে শুষ্ক নদীর ন্যায়
শুকীয়ে যাবে” ইহা শুনে স্থবির অতি কারুণ্য ও অচঞ্চল চিত্তে শ্রামণকে বললেন―“বন্ধ
শ্রামণ, তুমি রোদন করোনা। আমিই তোমার জন্য জীবন ত্যাগ করব।”
স্থবিরের এ বাক্য শুনে তুলক পণ্ডিত আপন চিত্ত দমন উদ্দেশ্যে স্বগত বললেন―“হে
পণ্ডিত, তোমার কি বুদ্ধ শাসনই প্রিয়তর, না কি তুমিই তোমার প্রিয়তর?” তখন মহাসত্ত এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন―
আমা হতে বুদ্ধ শাসন শত-সহস্রগুণ প্রিয়তর।”এ চিন্তার পর রাজার নিকট গিয়ে অভিবাদনান্তে বললেন―“মহারাজ,
এখন আমি শ্রামণের প্রতি অনুকম্পা করে তাঁর জীবন রক্ষা করব। তাঁর জীবনের পরিবর্তে আমার
জীবনই পরিত্যাগ করব।” এবলে নিম্নোক্ত গাথা ভাষণ করলেন―
২৩।
“শ্রামণের জীবনের পরিবর্তে আমার জীবনই ত্যাগ করব।
মহারাজ, তাঁকে মুক্তি দিয়ে আমাকেই হত্যা করুন”ইহা শুনে রাজা তাঁকে বললেন―“হে
পণ্ডিত, ইহা কি তুমি সত্যই বলছ?” তুলক পণ্ডিত বললেন―“হাঁ
দেব, আমি সত্যই বলছি। তখন রাজা সাধ বলে সম্মত হলেন। ইহাতে পণ্ডিত প্রমোদিত চিত্তে শ্রামণের
নিকট গিয়ে বন্দনা করে তাঁকে পঞ্চবন্ধন হতে মক্ত করে আকাশের দিকে চেয়ে নিম্নোক্ত গাথাদ্বয়
বললেন―
২৪।
“হে ভবৎ দেবগণ, এখানে সমাগত সবাই অনুমোদন করুন, শ্রামণের
জন্যই আমার এজীবন দান।
২৫।
এ দানপুণ্য প্রভাবে আমি অনাগতে নিশ্চয় বুদ্ধ হব এবং জনগণকে উত্তীর্ণ করব ও অমৃত পদ
লাভ করব।”এবলে মহাসত্ত¡ শ্রামণকে বললেন―“ভন্তে, আপনি শীল রক্ষা করুন কর্মস্থান ভাবনা করুন
এবং মৈত্রী পরায়ণ হয়ে শ্রমণ ধর্ম পালন করুন। যথাসুখে চলে যান।”
এবলে পঞ্চাঙ্গে বন্দনা করে সেখান হতে শ্রামণকে পাঠিয়ে দিলেন। তখন সে ঘাতকগণ তুলক পণ্ডিতকে
পঞ্চবন্ধনে বন্ধন করলেন এবং প্রহার করতে করতে শ্মশানে নিয়ে আসলেন। পণ্ডিতের মাতা ব্রাহ্মণী
এখবর শুনে উভয় হস্তে বক্ষে করাঘাত করে এলোকেশে উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ পরায়ণা হয়ে ত্বরিত
পদে এসে প্রিয় পুত্রকে পঞ্চবন্ধনে আবদ্ধ দেখে বললেন―“হে প্রিয় পুত্র, আমার নিকট আস”
এবলে বিলাপসুরে নিম্নোক্ত গাথাটি বললেন―
২৬। “হায় হায় তাত, এখবর পেয়ে আমি অনাথিনী জীর্ণা ও দুর্বলা
হয়ে পড়েছি। অদ্যই আমার মৃত্যু হবে, পরদিনের কথা কীইবা বলবো। হে প্রাণপ্রতিম পুত্র আমি
তোমার জন্য সমস্ত ধনই দিয়ে দেবো।” মহাসত্ত মাতার এরূপ বিলাপ শুনে বললেন―“মা,
আপনি এরূপ বিলাপ করবেন না। আমি বুদ্ধ শাসনে জীবন দান করব।”
এবলে নিম্নোক্ত গাথাটি বললে―
২৭।
“জগতে বুদ্ধোৎপত্তি বড় দুর্লভ, এরচেয়ে দুর্লভ বুদ্ধের
ধর্ম। আমি এবিষয় সম্যকভাবে জ্ঞাত হয়ে অনাগতে বুদ্ধত্ব লাভের জন্য জীবন ত্যাগ করব।”
একারণে পণ্ডিত স্বীয় মাতাকে নিবারণ করে বললেন―“মাত, আপনি এখান হতে চলে যান।”
এবলে তিনি শূলকাষ্ঠের নিকটবর্তী হয়ে তা স্পর্শ করে বললেন―“হে
শূলকাষ্ঠ, তুমি অপুণ্যবান। যেহেতু মনুষ্যগণ বুদ্ধকে দান করার জন্য বৃক্ষের দ্বারা বিহার
ও চংক্রমণাদি প্রস্তুত করেন। কিন্তু তুমি অপুণ্যবান, তাই এ অশুচি স্থান প্রাপ্তিই তোমার
নিয়তি।” সে দিবসেই বোধিসত্তে¡র পিতা সুজাত ব্রাহ্মণ বহু স্বর্ণে নৌকা পরিপূর্ণ
করে পাটলীপুত্র নগর হতে এসে চিন্ন নগরে প্রবেশ করলেন। তখন নগরবাসী জনগণ সুজাতকে দেখেই
বললেন―“ভবৎ, আপনার তুলক পণ্ডিত স্বীয় জীবনকে তুচ্ছ মনে করে
বুদ্ধ শাসনে জীবন দান দিয়ে মহাবিনাশ প্রাপ্ত হচ্ছেন। এখনি তাঁকে আমক শ্মশানে শূল-মস্তকে
আরোপিত করা হবে।” ব্রাহ্মণ শুনিবামাত্রই কম্পিত হৃদয়ে ত্বরিত পদে
আমক শ্মশানে গিয়ে পুত্রকে দেখে ঘাতককে বললেন―“ওহে, তোমরা আমার পুত্রকে বিনাশ করোনা। আমি এ পুত্রকে
ছেড়ে ইহলোকে থাকতে পারবোনা। এখন আমি তাকে ক্রয় করে নিয়ে যাব। এবলে তিনি ত্বরিত গমনে
রাজপ্রাসাদে উপনীত হয়ে, রাজার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে বললেন―“মহারাজ,
আপনি আমার প্রতি অনুকম্পা করে আমার পুত্রকে বিনাশ করবেন না। আমি তাকে ক্রয় করে নেব”
ইহা শুনে রাজা বললেন―“হে ব্রাহ্মণ, যদি আপনার পুত্রকে মক্ত করবার ইচ্ছা
করেন, তা হলে তার দেহের সমপরিমাণ স্বর্ণ দিতে হবে। ব্রাহ্মণ ইহা শুনে রাজ-বাক্য অনুমোদন
করে ত্বরিত গমনে নৌকা হতে বহুস্বর্ণ এনে রাজাকে দিলেন। রাজাও তুলক পণ্ডিতের দেহের সমপরিমাণ
সুবর্ণ গ্রহণ করে পণ্ডিতকে ছেড়ে দিলেন। তখন ব্রাহ্মণ নিজের প্রিয় পুত্রকে সঙ্গে করে
গৃহে উপস্থিত হলেন। তখন সংঘনায়ক নাগদীপক স্থবির ভিক্ষুদের এরূপ উপদেশ দিলেন―“বন্ধুগণ,
আমরা সবাই এমহদাশয় কুলপুত্রের দ্বারাই জীবন লাভ করেছি। আমাদের একান্তই অপ্রমত্ত ভাবে
চলতে হবে।” এবলে তাঁরা বত্রিশজন ভিক্ষ কোনও এক সীমায় একত্রিত হয়ে বিশ বৎসর বয়স্ক
ঐ শ্রামণকে উপসম্পদা প্রদান করলেন। এখন তাঁরা ভিক্ষ হলেন তেত্রিশ জন। তাঁরা কোন এক
নিরাপদ স্থানে এক এক জন এক এক বৃক্ষমূলে সমসীন হয়ে আধ্যাত্মিক ধ্যানে মগ্ন হলেন এবং
অচিরেই প্রতিসম্ভিদাসহ অরহত্ব ফল প্রাপ্ত হলেন। এ তেত্রিশজন অরহত সমাপত্তি উৎপাদন করে
চীবর পরিধান ও পারুপণ করে পাত্র হস্তে ধ্যান বলে সূর্যের ন্যায় আকাশমার্গে গিয়ে গ্রামে
পিণ্ডাচরণ করে এক বিহারে বাস করতে লাগলেন তাঁদের মধ্যে কেহ কেহ আকাশেই চংক্রমণ করেন,
কেহ কেহ আকাশেই স্থিত থাকেন, কেহ কেহ চন্দ্র সূর্যের নিকট গমন করেন, কেহ কেহ সুমেরু
পর্বতের চূড়ায় গমন করেন। এসব ঋদ্ধিমান অরহত এরূপ নানাবিধ আশ্চর্যজনক ঋদ্ধি প্রকাশ করছিলেন।
তখন চিন্ন রাজা স্বীয় নগরে উক্ত ভিক্ষুগণের অভূতপূর্ব আশ্চর্য ব্যাপার দর্শনে ভীত-সন্ত্রস্ত
হয়ে অমাত্যকে বললেন―“ওহে এ চোরগণ আকাশমার্গে এসে আমাদের হত্যা করবার ইচ্ছুক
হয়েছে মনে হয়। এখন আমরা তাদের কি করতে পারি?” অমাত্য বললেন―“মহারাজ, তা হলে আপনি তুলক পণ্ডিতকে ডেকে তা জিজ্ঞেস
করুন।” তখনিই রাজা পণ্ডিতকে ডেকে বললেন― ভবৎ পণ্ডিত, সে চোরগণ আকাশমার্গে এসে আমাদের বধ
করবার ইচ্ছুক হয়েছে মনে হয়। এখন আমাদের প্রাণ রক্ষার ব্যবস্থা কর।”
ইহা শুনে বোধিসত্ত প্রসন্ন বদনে বললেন―“মহারাজ, আপনি ভয় করবেন না। আমার এ প্রভুগণ আপনার
দুঃখ উৎপাদন করতে আসেননি। অপিচ তাঁরা নিজের মহাগুণ প্রকাশের জন্য এখানে আগমন করছেন।”
এবলে রাজাকে আশ্বস্ত করে রাজপ্রাসাদে মহার্ঘ আসন সজ্জিত করে দীপ-ধূপ সুগন্ধি পুষ্প
ও পুষ্পমাল্যে সুসজ্জিত করলেন। তৎপর তুলক পণ্ডিত কৃতাঞ্জলি হলে আকাশের দিকে নমস্কার
করে বললেন―“ ভন্তে, সুগত শ্রাবক অরহতগণ, আপনারা এখানে অবতরণ
করুন।” তখন তুলক পণ্ডিতের অনুরোধে সে তেত্রিশজন অরহত ভিক্ষ আকাশ হতে অবতরণ
করে রাজাঙ্গনে সুসজ্জিত মণ্ডপে উপনীত হয়ে সজ্জিত আসনে অনুক্রমে উপবেশন করলেন। সে সময়
রাজা রাজ পরিষদ ও জনগণ সেখানে উপস্থিত হয়ে অরহতগণকে বন্দনা করে একান্তে উপবেশন করলেন।
তৎপর ভিক্ষুদের প্রধান নাগদীপক স্থবির রাজাকে ধর্মদেশনা করলেন―
২৮।
“মহারাজ, যে ব্যক্তি চিন্তা না করে অন্যায় করে সে
ব্যক্তির সে কাজ সর্বদা কুফল উৎপাদন করে এবং দুঃখে নিপাতিত করে।
২৯।
রাজন্ যে ব্যক্তিগণ সর্বদা দোষজনক কাজ করে, সে কাজ সুফল দান করেনা, বরঞ্চ সর্বদা দুর্গতি
প্রাপ্ত করায়।
৩০।
যে ব্যক্তি বুদ্ধ ধর্ম ও সঙ্ঘের শরণ গ্রহণ করে, সে কখনো অপায়ে গমন করে না। সর্বদা স্বর্গেই
গমন করে।
৩১।
লোকাগ্র সম্যকসম্বুদ্ধই জগতে মঙ্গল নিদান। বুদ্ধের শরণ গ্রহণ করলে সর্ব দুঃখ হতে প্রমক্ত
হয়।
৩২।
বুদ্ধের দুর্দর্শনীয় গম্ভীর ধর্মই জগতে মহামঙ্গল সৃষ্টি করে। সে ধর্মের শরণ গ্রহণে
সর্ব দুঃখ হতে প্রমক্ত হয়।
৩৩।
দান গ্রহণের যোগ্য অনুত্তর সংঘই জগতের মঙ্গলদায়ক। সে সংঘের শরণাপন্ন হলে সর্ব দুঃখ
হতে প্রমক্ত হয়।
৩৪।
রাজন্ যেমন সুক্ষেত্রে বীজ সুষ্ঠরূপে বপিত হলে, তা নিশ্চয়ই অধিক পরিমাণে ফল প্রদান
করে।
৩৫।
রাজন্ সেরূপ বুদ্ধশাসনে কৃত কুশল কর্ম কাম্য সুখ প্রদান করে।
৩৬।
তদ্ধেতু পণ্ডিতগণ ইহলোকে পুণ্যকর্ম সম্পাদনের পর ইহলোকেই সুখভোগ করে এবং অমৃতপদ প্রাপ্ত
হয়।” তখন রাজা স্থবিরের ধর্মদেশনা শুনে রত্নত্রয়ের প্রতি প্রসন্ন হয়ে সমগ্র
নগরে ভেরী শব্দে ঘোষণা করালেন―“এ নগরে অবস্থানকারী জনগণ নিজের জীবন রক্ষা করতে ইচ্ছা
করলে ত্রিরত্নের প্রতি প্রসন্ন হও এবং শ্রদ্ধা সহকারে সংঘরত্নে যথাশক্তি দান দাও।”
তদবধি এ নগরে ঘাতক ও মিথ্যাদৃষ্টি লোক শূন্য হয়ে গেল। তৎপর রাজা তুলক পণ্ডিতকে সেনাপতি
পদে বরণ করলেন এবং পাপিষ্ট মিথ্যাদৃষ্টি পরায়ণ ব্রাহ্মণকে রাজ্য হতে নির্বাসিত করলেন।
তখনই অবীচি নরক হতে মহা অগ্নিশিখা উত্থিত হয়ে পাপিষ্ট ব্রাহ্মণের দেহ দগ্ধ করল। তৎমুহুর্তে
সে অবীচি মহানিরয়ে পতিত হয়ে মহাদুঃখে নিমগ্ন হল। রাজা নিজের গ্রামদ্বারে “চিন্নরাম” নামক একখানা মনোরম বিহার প্রস্তুত করে নাগদীপক স্থবিরকে
দান করলেন। রাজা চিন্নারামে বাসকারী ভিক্ষুসংঘকে চতুর্প্রত্যয় প্রদানে নিত্য সেবাপূজা
করতে লাগলেন। তুলক পণ্ডিতও সে চিন্নরামে অবস্থানকারী স্থবির প্রমুখ সমস্ত ভিক্ষুগণকে
মহাদান দিয়েছিলেন। নগরবাসীরাও সে বিহারে গিয়ে ভিক্ষুসংঘকে যথাশক্তি চীবর ও নানাবিধ
দানীয় বস্তু দান দিতেন। এ স্থবিরগণ তথায় যথায়ুষ্কাল অবস্থান করে বহুবিধ আশ্চর্য অলৌকিক
শক্তি প্রদর্শন করে অনুপাধিশেষ নির্বাণ ধাতুতে পরিনির্বাপিত হলেন। রাজা প্রমুখ মহাজনগণ
কোণাগমন ভগবানের শাসন রক্ষার্থে চিরজীবন দান-শীলাদি পুণ্যকর্ম সম্পাদন করে মৃত্যুর
পর দেবলোকে উৎপন্ন হলেন। ভগবান এ ধর্মদেশনা আরোহণ করে বললেন―“হে
ভিক্ষুগণ, ইহা বড়ই আশ্চর্য যে পূর্বেও আমি বোধিসত্ত¡ অবস্থায় এরূপ ধন ও স্ত্রী-পুত্র এমনকি জীবন পর্যন্ত
পরিত্যাগ করেছিলাম।” এবলে জাতক কথার পরিসমাপ্তি করে নিম্নোক্ত নয়টি সমাপ্তি
গাথা ভাষণ করলেন―
৩৭। তখন যে পাপিষ্ট মিথ্যাদৃষ্টি ব্রাহ্মণ নিরয়ে
প্রবেশ করেছিল, সে হল এখনকার দেবদত্ত।
৩৮।
তুলক পণ্ডিতের পিতা সুজাত ব্রাহ্মণ হলেন আমার পিতা মহারাজ শুদ্ধোধন।
৩৯।
তখন তুলক পণ্ডিতের মাতা সুজাতা নাম্নী ব্রাহ্মণী এখন আমার মাতা মহামায়া।
৪০।
পণ্ডিতের পত্নী সম্ভাবা নাম্নী সরূপা ব্রাহ্মণী এখন রাহুলমাতা যশোধরা।
৪১।
তখন পণ্ডিতের পুত্র সুবচ আর অন্য কেহ নহে, সেই এখন আমার আত্মজ রাহুল।
৪২।
চিন্নরাজ্যের জনাধিপ চিন্ননামক রাজা এখন আমার সেবক আনন্দ।
৪৩।
অমাত্যাদি প্রমুখ সমগ্র নগরবাসী জনগণ আমারই শাসন পরিপূর্ণকারী।
৪৪।
দানেরত তুলক পণ্ডিত নামক ব্রাহ্মণ এখন আমিই লোকনাথ তথাগত সম্যকসম্বুদ্ধ।
৪৫।
শ্রেষ্ঠসুখ প্রার্থনাকারী সবাই অতি গৌরব চিত্তে এ জাতক ধারণ কর।
(তুলক পণ্ডিত জাতক সমাপ্ত)
No comments